জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামী শক্তির মধ্যে বিভেদ হলে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘হিফজুল কোরআর ও কোরআন তেলোয়াত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব এবং পুরস্কার বিতরণী’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মামুনুল হক বলেন, রাজনৈতিকভাবে আপনারা একটা আদর্শের রাজনীতি করেন, আমরা আরেকটা আদর্শের রাজনীতি করি। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা কথা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, সেটা হলে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং ইসলামী শক্তি পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। যদি জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামী শক্তির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশ বিপন্ন হবে, বাংলাদেশ বিরোধী ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার শক্তিশালী হবে। যারা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলতে চায় তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু, তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুশমন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে আলেম সমাজের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই স্বাধীনতার শত্রুরা, এই শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় নির্মম অত্যাচার হলো বাংলাদেশের আলেম সমাজকে জাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করবার চেষ্টা করেছেন। যতজন আলেমকে তারা ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়েছেন, যতজন আলেমকে নির্মম অত্যাচার করেছেন, প্রত্যেকজন আলেমের সঙ্গে এমন নির্দয় আচরণ করেছেন এবং তাদের চরিত্র হননের এমন জঘন্য আচরণ করেছে ফেরাউন। কারুন নমরুদ যে আচরণ করেছিলো শেখ হাসিনা সেই আচরণ করেছে।
মামুনুল হক বলেন, আমি প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারব একজন নমরুদ, একজন ফেরাউন, একজন কারুন, আরেকজন মুনাফেক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই, এই চারটাকে এক পাত্রে গুলালে একটা শেখ হাসিনা তৈরি হয়। এজন্য শেখ হাসিনা ও তার প্রেত্মাতাদেরকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কোনোদিন পুনর্বাসিত হতে দেয়া যাবে না। যেকোনো মূল্যে সেটাকে রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদেরকে।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক জনতার হাতে পরিচালিত হবে, বাংলাদেশ সামনের দিতে অগ্রসর হয়ে যাবে। আপনাদের জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে নতুনভাবে ছাত্রদল আবার পুনর্গঠিত হবে, সুসংগঠিত হবে এবং মেধাবীদের দ্বারা দেশে গঠনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব এখান থেকে বেরিয়ে আসবে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
মামুনুল হক বলেন, আমি বিশেষভাবে তারেক রহমান সাহেবকে অভিনন্দন জানাই এবং আমি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি যে, আগামী দিনে দেশ গঠনে বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে আমাদের এক্সপার্টিজ আছে- সেই জায়গায় থেকে আমি তারেক রহমান সাহেবকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি পরিচালনায় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেকোনো ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইনশাআল্লাহ প্রস্তুত রয়েছি। এ পয়গাম এই মঞ্চ থেকে ছাত্রদলের অভিভাবক, বিএনপির মূল নেতা আগামীদিনে তাদের কান্ডারী তারেক রহমান সাহেবকে দিতে চাই।
তিনি বলেন, অনেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় পরিমাপ করে, আমি মনে করি- এটা অবিচার। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কেউই ইসলামী রাজনীতি করে না। বরং তাদের ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে। তবে এই দুইটি মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। ঠিক যেমনিভাবে আবু জাহেল ও আবু তালেব, কেউ কিন্তু ইসলামের পথে অনুসারি ছিলেন না। কিন্তু কেউ যদি আবু জাহেল ও আবু তালেবকে এক পাল্লায় মাপে তার চেয়ে বড় জালেম আর কেউ হতে পারে না। আমি মনে করি, ইসলামী রাষ্ট্রের দৃষ্টি কোন থেকে বিএনপি আবু তালেবের ভূমিকায় আর আওয়ামী লীগের আগাগোড়াই আবু জাহেলের ভূমিকা। কাজেই এই জন্য বিএনপিকে একথা মনে রাখতে হবে, তার নেতৃত্বকে এই কথা মনে রাখতে হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এই অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবার কথা আমন্ত্রণ পত্রে লেখা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি আসেননি।
খুলনা গেজেট/এনএম